71st pOsT : “অস্থিত্বে একা... কবি সমরজিৎ সিংহ” : প্রদীপ চক্রবর্তী


বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ- সব্যসাচী বাক্-এর জন্য কবিতালোচনা বিষয়ক গদ্যের কথা বললো গদ্যতো লিখছিই হাটি হাটি পা পা করে প্রায় ১৯ বছর ১৯৯৪ সালে বিভাসের(রায়চৌধুরী) কথায় রণজিৎ দাশের কবিতার ওপর ওদের পত্রিকা মুহূর্তের জন্য একটি গদ্য লিখেছিলাম সেই ই প্রথম হাতে খড়ি...
       ত্রিরিশের দশক থেকে আশি এই বিস্তৃত সময়ের নিরিখে বাংলা কবিতার ভাবনা, ভাষা, প্রকাশভঙ্গি, প্রকরণ, আঙ্গিকের বৈচিত্র্য অনেকের মতো আমাকেও নাড়া দিয়েছে বারংবার পড়তে পড়তে কিছু প্রচার বিমুখ, অন্যধারার কবি যারা মৌন অথচ নির্জনতায় ধীরে ধীরে তৈরী করেছেন মৌলিক বাক্ রীতি, ভাবনার স্বতন্ত্র চাল এবং মেজাজ-মর্জি সেই সমস্ত আড়ালের আড়ালে থাকা কতিপয় প্রিয় কবিদের নিয়ে হঠাত কিছু বলতে ইচ্ছে হল নিজের ভাবনার ব্যাকুলতায় শুরু করলাম গঙ্গাজলে গঙ্গাপুজো
       এভাবেই প্রায় ১২ বছর আগে, ২০০১, ১৪০৭ ফেব্রুয়ারীতে ত্রিপুরার অন্যতম কবি সমরজিৎ সিংহের গোধূলি রচিত কবিতার বইটি আমার হাতে আসে তখন সমরজিৎ দা ঘনঘন দুর্গাপুর আসতেন চুটিয়ে আড্ডা হতো বিভিন্ন ঠেকে গাছতলায়... পল্লবনির্জন ছায়ায়, শিল্পী সঞ্জয় রক্ষিতের স্টুডিওয় কবি ব্রজকুমার সরকারের ডেরায় দামোদর চড়া, উপল নির্জন বর্ষার পথে ছোট ছোট মাছধরার ডিঙির গলুইয়ের ভিতর কুমার মঙ্গলম পার্কে নিশীথরাত্রে আমার বাড়ির চূড়ায় টংঘরে সেই সময় সমরজিৎ দা-র পুত্র দুর্গাপুরে পড়াশুনো করতো সমরজিৎ-দা তাঁর এই চতুর্থ বইটা আমায় পড়তে দিয়েছিলেন
       ভালোলেগে গিয়েছিল স্পর্শ করেছিল, তীব্র মুগ্ধতায় এই বইটার শেষতম কবিতা অস্থিত্ব ২ সেই সময় এই কবিতাটা নিয়ে আলোচনা করেছিলাম
       আজ এতবছর পরে যখন একটি গদ্য-বইয়ের পান্ডুলিপি তৈরী করবো ভাবছি, তখন, খুঁজতে খুঁজতে
বেশ কিছু প্রকাশের পাশাপাশি অপ্রকাশিত লেখাও খুঁজে পাচ্ছি
       প্রায় ১২ বছর আগে লেখা, এই লেখাটি, হুবহু কিছুমাত্র না পালটে, অবিকল দিলাম
       যদিও দৃষ্টভঙ্গি, গদ্যের ভাষা এবং সমূহ আমি হয়তো আজ নিরন্তর কালখন্ডে বদলে গেছি এই বারো বছরে অনেক... অনেকটাই...

প্রস্তাবনা  

সমরজিৎ সত্তরের তরুণতুর্কী গোলগাল, ফর্সা, মঙ্গোলীয়ানদের মতো কাটা কাটা মুখ... ফুর্তিবাজ, রসিক, খাদ্য আর পানীয়র প্রতি তীব্র আসক্তি আর যে কোনো কৌতুহল নিরসনের জন্য একটু বাড়াবাড়ি রকমের ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা তার আছেস্পষ্ট কথা স্পষ্ট ভাবেই বলেন, কোনো রাখ ঢাক না রেখেই শ্লীল-অশ্লীল নিয়ে যারা প্রতি মুহূর্তেই আভিধানিক, খুলেআম শব্দ প্রয়োগে যারা দিনে দশবার অন্ততঃ কুলকুচি করে মুখধোন, তাদের ফৌতকাপ্তানি, ন্যাকামি, টিকরোমবাজগীরী হেলায় মশা-তাড়ানোর ভঙ্গিমায় হ্যাটা করেন সমরজিৎউস্কেদেয়া, বিতর্ক তৈরী করা, ভালমন্দ বিচার বোধের তীব্র অনুভব এবং প্রয়োজনে চুপ করে থাকাও সমরজিৎএর একটা নিজস্ব স্টাইল যদি তর্কের কারনে ধরেও নি, স্বাধীন ত্রিপুরার সন্তান সমরজিৎ কবিতা করার জন্য এক বিশেষ সময়ে, বলা চলে এই পশ্চিমবঙ্গে   একটি পত্রিকার ক্রান্তিলগ্নে এসে উপস্থিত হন এবং তাদের আচরনের কিছু প্রভাব তার মধ্যে গভীর ছাপ রেখে গিয়েছিল, তাহলে কি মেনে নিতেই হবে যে তার অনেকটাই ধার করা যাকে গোদা বাংলায় বলে মেকী কিন্তু কি তাই-ই!!! কৃত্তিবাসের স্মরনীয় মুহূর্তের সাক্ষী বহু তরুণই আজ প্রতিষ্ঠিত, স্বল্প পরিচিত, আলোকিত কিংবা হঠাৎই প্রতিষ্ঠান বিরোধী(যদিও এই কথাটি বড়ই হাস্যকর)
তবুও সমরজিৎএর লেখায়, ভাষণে, সাক্ষাৎকারে বারে বারে তার নিজস্ব একটা জলের আয়না কেনই বা পণ্যবিষ্ময়ের মতো ফিরে ফিরে আসে বিপন্ন নয় সচেতন ভাবেই লিখলাম পণ্য পণ্য বিষ্ময় পঞ্চাশের কবিতার রাজপুত্র, prince of poetry, শক্তি চট্টোপাধ্যায় যিনি কোনো আসরে উপস্থিত হলেই রং বদলে দিতেন, আলোর মুখ ঘুরিয়ে দিতেন নিজের দিকে তার সৃষ্টির চেয়েও তার বাচন ভঙ্গিমা, তার সামগ্রিক লেখালিখির বিচারের বদলে তার কবিতাকে পদ্য বলা আর মদ্য পান নিয়ে গল্প দাদুর আসর গুলো ভরে থাকতো, বৈঠকবাড়ির বড় দালানগুলোয়
(সে সময় WHITE MISCHIEF, বাকর্ডি-রাম নিদেন পক্ষে দুঢোক হুইস্কির গুণে বালিগঞ্জের বুদ্ধিজীবীর মতো মুখ করে, প্রায় শত শত বাঙালী তরুণ কবি ভাবতেন, এই বার, ঠিক এবার থেকেই, শক্তি চাটুজ্জের মতো লিখতে শুরু করে দেব দেখে নেবেন...,কিন্তু হায়! কোথায় তাদের এ-বঙ্গভান্ডারে কুশলী কাব্যকণিকা!)
একই অবস্থা তুষার রায় ও এরকম কারোর কারোর তাদের লেখার সিরিয়াস আলোচনার জন্য কোনো প্রচার মাধ্যম-ই বিন্দু মাত্র সময় ব্যয় করতে রাজি ছিলেন না আর তার নিটফল, আজকের কোনো তরুণ পাঠক/পাঠিকারই অজানা নয় কিন্তু কেন? এছলনার মর্মান্তিক দায় কার কোনো একজন কোনো একটা মাধ্যম, কেউ কেউ, ছদ্মবেশী কোনো, মূকাভিনেতা তা তো নয় সময়ের বদল,পরিপার্শ্ব এবং চেতনার রূপান্তরও কি তার দায়ভার বহন করবে?
তবু সময় যায় অদৃশ্যজীবাণু হয়ে, শূন্য লিখে লিখে, পড়ন্ত বিকেল থেকে ছায়ায় হাওয়ায়, মেঘে, রোদ কলোনীর ভেজা গানগুলোয়  বয়স্ক নির্জনতায় শাঁখামুটির সাপের টিলায়, গিন্নি শকুনের কলহাস্যে, জটিল অঙ্ক পেরিয়ে হলুদমণি পাখির, থৈ থৈ চোখে কোথাও হয়ত আজও নির্জনে, কুপি জ্বেলে পাঠকই কবিতাউবুঝুঁটি বেঁধে কলেজ কেটে পড়া কোনো যুবতী, আজও সরল মনে শোনাচ্ছে, তার প্রিয়জনকে, আমাদের কবির কবিতা অঝোর সময়, নক্ষত্র প্রেম, অন্ধকার নদী পেরিয়ে, নতুন নতুন কবিতা পাঠকের, জ্যান্ত সবুজ টাটকা মনে, আজও এদের কবিতা নিরবে ছটফট করে, ডানা ঝাপটাচ্ছে অরণ্যে, ব্লাস্টিং-এ, নীল সন্ধ্যার ফরমালিন বাতাসের রেটিনায় সারাদিন শুকনো পাতায় সন্ধ্যানদীর কাছে শুয়ে থাকে হেমন্তের অরণ্যে ঝরে পড়ে, শিশিরে সেই সব ঝরাপাতাদের পিঠোপিঠি, বেপরোয়া, পোষ্টম্যান...

বিষয়বস্তু

সমরজিৎ সিংহের কবিতা ভাবনা  এবং আমার কবিতা ভাবনা অনেকটাই আলাদা আমাদের শুরুর সময়, বয়স, প্রেক্ষাপট, পরিপার্শ্ব এবং অবশ্যই মানসিকতা অন্যরকমের এই ফারাক থাকা- সত্ত্বেও কেনই বা  আমি তাঁর একটি কবিতা নিয়ে আলোচনা করব, ভাবলাম কেন?
প্রথমেই বলে রাখি, অধুনান্তিক সময়ের ভাবনা থেকে চেতনার বিন্যাস ও বিস্তার আমাকে ভাবায় আমি মনে করি, মনে করতে বাধ্য হই বা সময় আমাকে বাধ্য করায় যে প্রতি কবির একটা নিজস্ব ভাষা থাকা দরকার আর সে ভাষা তৈ্রী হয়ে গেলে কবিতা এমনি এ্মনিই জন্ম নেয় কবিতার জন্য ভাষা নয়, ভাষার জন্যই কবিতা আমার বিশ্বাস কি লিখছি বড় নয়, কি ভাবে লিখছি এবং কতটা স্বতঃস্ফূর্ত, সেটাই বড় তিনজনের সাক্ষাৎকার পড়ছিলাম জীবনের সমগ্রতা নিয়ে জিড্ডু কৃষ্ণমূর্তি, ডেভিডবম্ এবং ডেভিড্ শাইনবার্গের সাত-দফা কথোপকথন ডেভিডবম্ আধুনিক পদার্থবিদ্যার এক অন্যতম স্তম্ভ ডেভিড শাইনবার্গ মনস্তত্ত্ববিদ্ তাঁরা প্রশ্ন করেছিলেন জিড্ডু কৃষ্ণমূ্র্তিকে জিড্ডু কৃষ্ণমুর্তির বক্তব্যের একটা ধ্রুব দিক, প্রকৃতির সমগ্রতা ও প্রকৃতির সত্য কৃষ্ণমূর্তি তাই প্রত্যাখ্যান করেন সমস্ত প্রভুত্বকে তিনি মানেন না ধর্মের প্রভুত্ব, কোনো রাজনৈ্তিক বা সমাজতাত্ত্বিক বা দার্শনিক মতবাদের বা তাদের বিরোধী মতবাদসমূহের প্রভুত্ব রাষ্ট্রের প্রভুত্ব, সমাজের প্রভুত্ব, সংস্কৃতির প্রভুত্ব, সেই সংস্কৃতি ইতিহাসের কোনো প্রাচীন অনুশাসন প্রসূতই হোক বা আধুনিক পূঁজিবাদের সহচর অর্বাচীন ভোগবাদ প্রসূতই হোক কিংবা সমাজ-সংস্কৃতি-সভ্যতাকে প্রত্যাখ্যান প্রবণ কোনো নৈ্রাজ্যবাদের প্রভুত্বসর্বোপরি তিনি মানেন না তাঁর স্বমতের প্রভুত্ব তিনি মানেন না কোনো প্রতিচ্ছবির প্রভুত্ব কেন না, সমস্ত মতবাদ, সমস্ত অনুশাসন সময়ের প্রতিচ্ছবি (এমন কি ঈশ্বরের প্রতিচ্ছবি) তাঁর কাছে মানবচিন্তন প্রসূত এবং সেহেতু সীমিত ও সমগ্রতার খন্ডমাত্র এবং সেহেতু প্রকৃত সত্য নয়
আমাদের যন্ত্রনাময় জীবন নিয়ে যখন আমরা তাঁর বক্তব্য সান্নিধ্যে এসে জানতে চাই কী করণীয় আমাদের?-তখন কৃষ্ণমূর্তি দ্বিধাহীন ভাবে আমাদের দৃষ্টি ফেরান প্রকৃতির প্রাঙ্গনে ফুটে ওঠা কোনো তাজা ফুলের দিকে এবং বলেনঃ কিছুই করার নেই তোমরা শুধু ঐ ফুলটিকে দ্যাখো...
কৃষ্ণমূর্তি আরো বলেন, “যখন পরপ্সর বিরোধী কামনা, পরস্পরবিরোধী ইচ্ছে, পরস্পর বিরোধী চিন্তারা সংঘর্ষ নিয়ে আসছে, তখন যন্ত্রণা ভোগ করেছেন আপনি তখনই সচেতন হচ্ছেন আপনার খন্ডতা সম্পর্কে”
 আর তাই মানুষ জৈবিক, শারীরিক নিরাপত্তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় মনস্তাত্ত্বিক নিরাপত্তাকে “আমি”-এই ”আমি”-আমাকে সম্পুর্ণ নিরাপত্তা দেয় মনস্তাত্ত্বিক ভাবে মনস্তাত্ত্বিক নিরাপত্তা জৈবিক নিরাপত্তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আর জ্ঞান তাই চিরকালই অতীত
এখন প্রশ্ন হল “জৈব” বলতে আমরা কি বুঝি দেহ, মনন, সম্পর্ক, শারীরিক বৃত্তি, মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা না, বহুস্তরীয় ও বহুরৈখিক দৃষ্টিভঙ্গির পুরনো কোনো একপেশে ধারনাকে ডিকোড করতে করতে ননলিনিয়র চেতনা থেকে গুরুত্ব পাওয়া জটিলতা আর জৈব কথাটি এলেই কেমন যেন অবচেতনে এসে ধাক্কা দেয় “লিঙ্গ” নামক শব্দটি
লিঙ্গ শব্দের অর্থটি ব্যাখ্যা করা যাক লিঙ্গ শব্দের প্রথম অর্থ “জ্ঞান সাধন” অর্থাৎ যার দ্বারা জ্ঞান
সাধিত হয়, তাকে লিঙ্গ বলে লিঙ্গ শব্দের কেবল Gender, Penis বা vagina’ মানে আছে তা নয় দিশা থেকে বিদিশাগ্রন্থে বিশিষ্ট ভাবুক, তাত্ত্বিক, প্রাবন্ধিক কলিমখান বলেছেন, “যার দ্বারা কর্ম সাধিত হয়, সেই কর্মসাধন কে সাধারণ ভাবে হাতিয়ার বলা হয়ে থাকে”
মার্ক্সীয়টারমিনোলজি অনুসারে একে বলা হয় “মিনস অব প্রোডাকশন বা উৎপাদনের উপায়” হাতের সাহায্যকারী বন্ধু বা ইয়ার বলেই কর্ম সাধনের নাম হাত-ইয়ার বা হাতিয়ার দেহের সাহায্যকারী হাতিয়ারের পাশাপাশি মনের হাতিয়ারটিকেও তাঁরা শনাক্ত করেছিলেন এবং তার নাম দিয়েছিলেন লিঙ্গ প্রাচীন ভারতীয় পণ্যের কাঁধে চেপে প্রাচীন ভারতীয় শব্দের বিদেশ ভ্রমণ ও যস্মিন্ দেশে যদাচার গ্রহণের নীতি মান্য করে ঐ “লিঙ্গ” শব্দই Lingo, Lingual, Linguist, Linguistic, Language ইত্যাদি বহু অভিধায় বি্ভক্ত

আর এই “পণ্য”-“বিপণন”ই আজকের অধুনান্তিক সভ্যতার যাবতীয় সংস্কৃতি এবং চেতনার বিন্যাসকে “পণ্য বিষ্ময়ের” দোড় গোড়ায় এনে দাঁড় করিয়েছে আর আজকের কম্পিউটার বিজ্ঞানের ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয়, বিশ্বের সমস্ত ধরা-অধরা সফটওয়্যার-ই লিঙ্গ পদবাচ্য এবং বিশ্বের সমস্ত জানা অজানা হার্ডওয়্যারই যোনি পদবাচ্য আগুন জ্বালাতে পারার বিদ্যা যদি আদি সফটওয়্যার হয়, তো পরমাণু জ্বালানি জ্বালতে পারা এ যুগের সফটওয়্যার
তেমনি “সমিধ কাঠ” যদি আদি হার্ডওয়্যার হয় তো “নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্রোজেক্ট” এ যুগের
হার্ডওয়্যার এ যুগের যত প্রকার Infrastructure, Superstructure ইত্যাদির কথা বলা হয় তা সবই “যোনি পদবাচ্য” এইভাবে সর্বত্র বিরাজমান অতিচেতনা যখন অমৃতলিঙ্গ, বিশ্বব্রহ্মান্ড প্রসারিত সম্পর্কের নিয়ম জাল তখন ব্রহ্মযোনি তন্ত্রশাস্ত্রের কোনোও কোনোও স্থলে একে বিশ্বযোনি শব্দেও উল্লেখ করা হয়ে থাকে
আর এইসব আলোচনার মধ্যে থেকেই আমাদের সমরজিৎকে খুঁজে নিতে হবে তার নদীর মানে, স্নিগ্ধ শুশ্রুষার জল আর আলো কে আলো কেই কী!! তার ডায়েরি, গ্রন্থ, বিছানা বা ওয়্যারড্রোব তাঁর তন্ন তন্ন করে খুজে বেরানো শঙ্খ, উলুধ্বনি, গীর্জারঘন্টা, আজানের শব্দ, কামান চৌমুহনী জীবন রহস্যের ভাঁজে ভাঁজে সাপলুডো, ষড়যন্ত্র, গুপ্তঘাতক, প্রতারণা, অপ্রেম, শরীর, ঘৃণা, ভালবাসা, ক্রোধ, স্বপ্ন, নখ, দমন, দাঁত, ঈর্ষা, সন্ন্যাস ও পরাজয় আত্মার স্বরুপ আর হস্তমৈথুনের ক্লান্তি কে অতিক্রম করে, এই একঘেয়ে বেঁচে থাকার ধারাবাহিক জনহীন প্রান্তরে, কোন নাগরিক ভোরে গতরাত্রের মদ্যপান আর আকন্ঠ বৃষ্টিতে ভেজার বৈপরীত্যে’, দাঁড়িয়ে সারাজীবন খুঁজে যাওয়া ভুল জায়গা থেকে, ভুলমানুষের যাত্রা থেকে, সিঁড়ির নীচে চাপা অন্ধকার আর আমাদের সূর্যাস্ত, অর্ধস্ফুটবাক্য, বিস্ময় আর সম্পর্ক থেকে অতিধীরলয়ে প্রলয় সমুদ্রের অন্ধকার নিশীথজল আর কূর্মাবতার, ফসফরাস, বালির প্রাচীন জীবাশ্ম থেকে খুঁজে নিতে হবে এক নির্জন, উপেক্ষিতকে যার ইতিহাস, পুরাণ, লিবিডো, এক অন্তর্ভেদী মোমের আলোর মত উজ্জ্বল, পরজন্মের স্মৃতির ভেতর যার দ্রুত পর্দা সরে যেতে থাকে ক্রমশ আর সেই অন্ধকারহীন, আলোহীন, ভয়ঙ্কর, বিপজ্জ্বনক মুহূর্তে-স্ত্রী, পুত্র, গোপনপ্রেমিকা, বন্ধু, পিতামাতা, শত্রু, মিত্র, অভিমান, জেদ, সম্পর্কহীন আত্মার মুখাগ্নি করে সেই “আমি”-আমার আমি যে আমিত্ব কে ছাপিয়ে এক উদাসীন, লিপ্ত নির্লিপ্ত, ভোগীও ত্যাগীর চূড়ান্ত অশ্লীল বলে অসংযমীর গূঢ় সান্ধ্য ভাষায় লিখে রাখা অন্য এক অভিজ্ঞতা, যা সমাজসংসারের তথাকথিত লৌকিক-অলৌকিক, সত্য-আপাতসত্য, বাস্তব ও কাল্পনিক অভিজ্ঞতার মিশ্র চেতনায়, বারংবার ধাক্কা দিতে দিতে, জাগিয়ে তোলে এক পরজন্মের বিরল পথিককে এই খন্ড অখন্ড আমির শুরু কোথায় এর উৎস কি আছে? আছে কি সমাপ্তি !...
(আলোচনার দ্বিতীয় কিস্তি পরবর্তী সংখ্যায়)