74Th pOsT : শূন্য দশকের ৩টি কাব্যগ্রন্থ সম্পর্কে লিখছেন উমাপদ কর


অ-কার তিন কবির কবিতাকারি

অনিমিখ, অনির্বাণ, অমিতাভ। এক অপলক, নেভে না এমন, অমিত জ্যোতিবর্ণা-নুক্রমে তিনটি নাম। তিনই অ শুরূ। তিনই কবি। তবে সম্পূর্ণ চেনা যায় না। পদবীর একটা মাহাত্ম এদের আরেকটু চেনাতে পারে। পাত্র, চট্টোপাধ্যায়, প্রহরাজ। এবার বর্ণা-নুক্রমে সাজালে চ পা প্র। গেল আরেকটু চেনানো? সে না হয় হল, বলা হচ্ছে কবি। তা, কে পড়ে এদের কবিতা? জানিনা, তবে আমি দাবি করতে পারি, আমি পড়েছি পড়ি। এদের নিয়ে একটু গল্প, কিছু কথা বললে মনে হয় আর কারো ভাল না লাগুক আমার লাগবে। অতএবঃ
অনির্বাণকে তার বই(লোডশেডিং)পড়ে একটা চিঠি লিখেছিলাম। তো সে চিঠি গোটাটা উল্লেখ করলে সম্পাদকের বাঁশ, আমার কপালে মার। এক-আধটু বলি----“ এই কাব্যগ্রন্থ নিয়ে বেশি কথা হবে না। ‘লোডশেডিং’ এই পরিচিত দ্যোতনার মেকিং এত ব্যাঞ্জনাময়, এত ব্যাপক অভিঘাত সৃষ্টিকারী, এমন সুরেলা কঠোর, এতই শ্লেষ ও আশ্লেষের হাত ধরাধরি, আশা ও আশংকার এমন আষ্ঠেপৃষ্ঠে বাঁধাবাঁধি, এমন তরল চটুল গতি আর এমনই উথল উৎসেচন যে অধিকাংশ কবিতা পাঠের পর ‘মাম’ হয়ে যেতে হয়। ............... একটা ‘মিস্ট্রি’র (রহস্য বলতে পারলাম না) বাহ্যিক এমনই খেলা এবং আভ্যন্তরীন এমনই রসের এক সূক্ষ্ণ রেশ (গাঢ় রস যখন ঝুলে থাকে বা পড়ে এমন অবস্থায়) যে কোনো কবিতা থেকেই অন্য কবিতাকে প্রায় আলাদা করা চলে না। এমনই প্রসাদগুন যে চাখতে চাখতে শেষ পর্যন্ত যেতেই হয়।
রসের কথা বলছিলাম। ইদানীং তোমাদের বয়সী অনেক কবির কবিতায় কেমন একটা কাঠখোট্টা ভাব। অতিরিক্ত সিরিয়াস। মেধা আছে, বুদ্ধি আছে, আছে প্রচুর তথ্য ও জ্ঞান-বিজ্ঞান, অভিজ্ঞতাও কম নয়, মেকিং এ তারা খামতি রাখে তাও নয়, তবু যেন মনে হয় রসটা শুকনো আমসি বা বহু পুরোনো হরতকি। আর এই গ্রন্থে রস আমসত্ত্ব। কিন্তু পাকা রসাল ফল নয়। এবারে চাই দুধের যোগান, সে আছে তার তরলতায়, প্রয়োজন একটি কদলির, সে আছে ‘প্রেম’ এই শব্দটির মায়ায়, জরুরী দলন, সে প্রতিটি ‘মনে হওয়ায়’, ‘মতো’তে, ‘যেন’তে আর কর্মকে কর্তায় কর্তাকে হেলায় কর্মে পরিনত করার মুন্সীয়ানায়, আছে ‘ছিল আছে থাকবে’কে এক সময়কালে আত্তীকরন করায়, আর ‘র মেটেরিয়ল’ সংগ্রহের সার্বজনীনতায়। ব্যাস, আর কী চাই? আমাদের মত পিঁপড়েদের পাতে হেঁটে যাওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না, আর দূরবর্তী মাছি হিসেবে হাপুস...।”
এক জায়গায় লিখেছি—“ আমি তো ভেবেছিলাম দু-একটা উদাহরন তুলে কথা বলব। কিন্তু দেখলাম সে বড় বিপদজনক। প্রথমতঃ কাকে ছেড়ে কাকে ধরি? দ্বিতীয়তঃ কম্বলের সব লোমই আছে কম্বলের মধ্যে। তৃতীয়তঃ যে মজাটা ফল্গুর মত বইছে, সে মজাটার খোলস ছাড়িয়ে থকথকে চিংড়ি করে তোলা, এটা কাম্য মনে হয়নি। লোডশেডিং কে নিয়ে এত মজা করে নিজেকে দেখা, চারপাশটা দেখা, এত ভাবনা চারিয়ে দেওয়া সত্যি বলছি আমার আগে হয়নি।”  আবার আরেক জায়গায় লিখছি---“ ভাষা নিয়ে কেরামতি নেই (যা আজ প্রায়ই নজরে পড়ে), কারিগরি আছে। কিছু কাজ আছে, যে কাজটা কবিতাবয়নকে সহজ করেছে, অথচ নিজে তার কাজ নিয়ে ক্যাটালিষ্টের মত উপস্থিত। এটা এক ধরনের মুন্সীয়ানা। তুমি যা পরিবেশন করতে চেয়েছ তোমার ভাষা তাকে সহজে বহন করেছে।”
দুটো প্রশ্ন তুলেছিলাম-- এক, কাব্যগ্রন্থের পাতায় পাতায় নানাবিধ জন্তু জানোয়ার। বন্য আবার গৃহপালিতও। হাতী বাঘ সিংহ সাদা সফেদ নিজস্ব রঙের বহুবার। এছাড়া লাল উট, জটায়ু, সাদা ভাল্লুক, হরিণ। গৃহপালিত—গাভী, কুকুর, বেড়াল, গাধা, ঘোড়া। প্রশ্নটা হল “তুমি কি এদের প্রতীক করতে চেয়েছ? বিশেষত রকমারি হাতী আর বাঘ কে? ভয় ছিল। বিশেষত হাতি আর বাঘের ক্ষেত্রে, এরা বুঝি কোনো প্রতীক হয়ে গেল। ......... কিন্তু এদের ব্যবহার এমনই ভিন্ন দ্যোতনাময় যে আমার কাছে মোটেও প্রতীক মনে হয়নি।” দুই, —“ কাব্যগ্রন্থে তুমি এতবার ‘মনে হয় যেন’ বা ‘যেন মনে হয়’ বা ‘আমার মনে হয়’, ‘যেন’, ‘মতো’, ‘ন্যায়’ ব্যবহার করেছ যা ইদানীং (বিশেষত তরুনেরা) খুব কমই ব্যবহার করে। কিন্তু তুমি যেভাবে এদের ব্যবহার করেছ তাতে তা লগ্ন হয়েই আছে। মনে হয়নি উপমাকেই তারা শুধু রেফার করছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উপমার উপমান উপমেয় থিয়োরি মানে নি। ......। প্রশ্নটা হল এদের মধ্যে সামান্য কিছু কি এড়ানো যেত না?” হুঁ। কবিকে কেউ এভাবে প্রশ্ন করে? আমি করেছিলাম মূলত কিছু মিথস্ক্রীয়ার জন্য। তা টেলিফোনে একদিন এসব নিয়ে অনেক কথা।

অনিমিখকেও চিঠি। কোনো কিছু ভাল লাগলে (বইটির নাম- কোনো একটা নাম) সেটা করিয়ের সঙ্গে শেয়ার করতে ভাল লাগে । সেই ভাললাগায়। কিছু অংশ—“ বইটি তিনটি পর্বে বিভক্ত। আমি মুশকিল করেছি, প্রথমেই ‘যা যা থাকে যাতায়াতের পাশে’ পর্বটি পড়তে শুরু করে, এটা যে বইটা গঠনে দুজনের আলাপ তা না বুঝেই। শুরু করে আর ছাড়তে পারিনি। এতে ভাল-মন্দ দুইই ঘটেছে। ভাল, তোমাদের আলাপ পড়া গেল, কবিতা নিয়ে তুমি ও তোমরা কী ভাবছ! উঠে এসেছে কিছু শব্দ এবং শব্দ-বন্ধ, যেমন—সারল্য, স্মৃতি, গ্রাম-শহর, প্রযুক্তি, ছবি, ফিল্ম, ভাষা, বিষয়, ভাবনা, সংশ্‌য়, আবহমান কাল, সমাজজীবন, আমি, প্রশংসা, আনন্দ, টেকনিক, সিগনেচার, সচেতনতা, ইত্যাদি অবধারিত আলোচ্য। পেলাম কবির কিছু প্রত্যয়ী অভিনিবেশ। ক) কবিতার একটা আত্মাও থাকে। খ) আমরা ভুল বন্দনা করি, শহর অনেক সোজাসাপ্টা (গ্রামের তুলনায়)। গ) কলকাতা কখনোই সম্পূর্ণ আরবান হয়ে উঠতে পারেনি। ঘ) ভাষার সঙ্গে সম্পর্ক বেশ কষ্টের। কিছুটা আনন্দেরও। ঙ) খুব ভেবেছি কবিতায় নিজের সিগনেচার তৈরী করা না করা নিয়ে......, কিন্তু নিজের ভাষা পেয়ে যাওয়া নিয়ে আমি আর বুঁদ হয়ে থাকতে চাই না। চ) কবিতা চারপাশে আমি দেখতে পাইনা। ছ) ক্রমশই আমি বিশ্বাস করছি যে কবিতার বিষয় হয়। জ) গত সাড়ে তিন-চার বছরের লেখা লিখতে খুব অনিবার্যভাবে আমি স্মৃতিকে আশ্রয় করেছি। ইত্যাদি। আর মন্দ, এসব পড়তে পড়তে বইটা নিয়ে কিছু প্রিকনসেপশন তৈরী হয়ে গেল অবধারিতভাবে।”
আবার কবিতাকে কেন্দ্র করে যে কথাগুলো লিখলাম--- “ ‘কোন দিকে সে যাবে’ এরকম একটি প্রশ্নমূলক সংশয় নিয়ে বইটির শুরু। পরে অনেক কবিতায় এমন প্রশ্ন তার সংশ্য় নিয়ে জারি। সংশয় থাকলেই অন্বেষণ শুরু। সেও আছে পঙক্তিতে পঙক্তিতে। এটি কবির সহজাত একটা বিষয় ও ভাবনা। সংশয় আর খোঁজ তাকে অগ্রসরমান করে, অন্যের থেকে আলাদা করে, কবিতায় কবিতা খুঁজে পাওয়া যায়, যা আমি পেয়েছি তোমার এই বইএ।
গ্রামজীবনের অতি সামান্য ছাপ ও ছোপ তোমার কবিতায় আছে, কিন্তু তা আমার কাছে ‘অবসেশন’ এর মতো মনে হয়নি। তার চেয়ে অনেক বেশি এসেছে নিজেকে নিয়ে অর্থাৎ ‘আমি’কে নিয়ে ভাবনা ও তার পরিমন্ডল। এমনটাও মনে হয়েছে নগরজীবনের দাঁড় বাওয়া নৌকাটাও সবসময়েই তার সোজাসাপটা চলার পথ পায়নি। তাই সেখান থেকেও উদ্ধার চাওয়া রয়ে গেছে। ‘এই আমাদের হরিৎক্ষেত্র\ রান্নাবাগান\ এই এক হাওয়ার মধ্যে হাওয়া বদলের ভুত’।
‘আমি’কে নানাভাবে প্রশ্ন করে উত্তর খোঁজা হয়েছে। অনেক সময় প্রশ্নটি সারল্যে ভরা। আবার অনেক সময় প্রশ্নটা ঘিরেই নির্মাণ। এই বই থেকে কত উদাহরন দেব! দু-একটা—‘শ্রেষ্ঠ তোলপাড় থেকে ছিটকে আসে ক্ষার নাকি মধু?’, ‘উদগ্রীব হয়ে থাকার নামই কি শিল্প’, ‘ধুয়ে মুছে দিলেই কি নতুন হয় জুতো?’। এই প্রশ্নগুলোতে মজা লুকোনো। কেননা কবি কখনই এর তাৎক্ষণিক উত্তরদানে প্রবৃত্ত হয়ে তাকে সরলরৈখিক করেননি, বা কোনো মেসেজ দেবার প্রবনতা দেখাননি, ফলে যে যেমন ভাবতে পারে, এমন বহুরৈখিকতার জন্ম দেয়। ভাল লাগে। আরো লক্ষ্যনীয়, এর কবিতায় উপস্থিতি, কেমন আলতো করে তুলে দেওয়া, অনেকটাই ভারহীন। বড় মুন্সীয়ানার প্রয়োজন। ভাল।
তোমার কবিতার টেকস্ট আমি লক্ষ্য করেছি। বিষয়, (তুমি বলতেই পার) তার জবর ওজন নেই। কোনো কেন্দ্রীকতাও লক্ষ্য করিনি। বরং আছে একটা চলমানতা, দৃশ্যকল্পগুলো শুধুমাত্র ছবিকেই প্রতিভাত করেনি। ফলে ভাবনার বিস্ফার ঘটাতে জুড়ি নেই। ভাল লাগে।
চলমানতার জন্য তৈরী হয়েছে কোলাজ। কবিতার মধ্যে কবিতা। কয়েকটা তুলতে পারি। ‘স্বল্প ভোরের পর শব্দের আমিষ উঠছে’, ‘যেন দিগন্ত এসেছে ঘরের মধ্যে’, অন্যের নগ্নতাকে নিজের ভাবছে কেউ’, ‘একতারার গায়ে দোতারা লাগছে/ দুই চোখ বুজে আছে রান্নাপ্রনালী’, ‘ভাতের সঙ্গে নামিয়ে দিই ভাতের হাঁড়ির আত্মাকে’, ‘মাত্রই কয়েকবার, দেহের ভিতর এই গোল হয়ে বসা’ ইত্যাদি। এদেরকে কবিতার মধ্যে বিশেষ পঙক্তি হিসেবে দেখিনা। এরা কবিতার মধ্যে কবিতাকে ঝমঝমায়। ভাল লাগে।
স্মৃতি আর স্মৃতিনির্ভরতাকে আমি এক মনে করি না। স্মৃতিনির্ভরতায় স্মৃতি-বুঁদের প্রশ্ন আসে, যদিও তাতেও কবিতা ক্ষুন্ন হয় তা মনে করি না। কিন্তু তা বর্ণনার দিকে চলে যাওয়ার ভয় থাকে। তুমি স্মৃতিকে ঝলক হিসেবে ব্যবহার করে সামনের দিকে সমস্ত পথটাই খুলে দিয়েছ এবং তাতে চলেছ। এটা যে করা যায় তা তুমি করে দেখিয়েছ এই বইএ। স্মৃতি অনুসরনে বর্ণনা এখানে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। ভাল লাগে।
... ভাষা নিয়ে তোমার মাথা ব্যথা আছে ঠিকই, তার প্রতিফলনও ঘটেছে কবিতায় তবে ‘নিজের ভাষা পেয়ে যাওয়া নিয়ে... বুঁদ হয়ে থাকতে চাই না’ এই সাহসিক ভাবনার জন্য তোমাকে সেলাম। চেষ্টাকৃত ভাষাবিন্যাসের চেয়ে ভাবনার বাহন হিসেবে ভাষা যোগানোর চেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই।”

অমিতাভকে চিঠি নয়, সামনা-সামনি সামান্য ভালপাহাড়ে, আর টেলিফোনে বেশিটা। আমার কথাগুলো সাজালে, ‘অন্যব্যাপার’ অন্যরকম ব্যাপার-স্যাপার হলে কী আর করতে পারি! সাজাই না, বলা কথাগুলো। ক) ভাষা একদম অন্যরকম ব্যাপার। মনে হবে যেন বে-আক্কেলে। একি কবিতার ভাষা হতে পারে? আমার মনে হয়েছে হতে পারে এবং হয়েছেও। খ) ধেবড়ে দেওয়া তেবড়ে দেওয়া শব্দ বিশেষ নাই। কিন্তু সাধারন শব্দই এমনভাবে বসানো বা সাজানো যে সার্কাসের ট্রাপিজের খেলা মনে হয়। মনে হয় কতটা নিজে নিজে দোলার পর পুরুষ এথলিটটি তার দোলা শুরু করবে ঝাপানো মেয়ে এথলিটটির জন্য তা যেমন নির্দিষ্ট, তেমনি মেয়ে এথলিটটিও কখন দুলতে দুলতে হাত ছেড়ে ঝাপাবে পুরুষ হাতটির দোলায়মানতার দিকে তাও নির্দিষ্ট। এরই মধ্যে একটা ভয় ভয় ভাব জারি দর্শকের, কী ঘটে কী ঘটে। এমনি দুলকি চালে ভাষাটি যেমন চলে, মনে হতে পারে তাহলে কি গতি কম, দোলে-দোদুল? না তা কিন্তু নয়। ট্রাপিজের এই খেলাটি চূড়ান্ত গতিময় হয়ে আছে এখানে। গ) গতির সঙ্গে আবেগের একটা প্রচল মিল তো আছেই। তা আবেগ আছে এখানে। আবেগ আমি অনুভব করেছি মর্মে মর্মে। সে আবেগ যতটুকু না ভাসিয়ে নিয়ে গেছে তার চেয়ে ঠোক্কর খেয়েছি প্রচুর। তার মানে? এই বলছেন গতি আবার বলছেন ঠোক্কর। হ্যাঁ প্রথম প্রথম তাই। পরে ঠোক্করটা কম। প্রথম পাঠ, দ্বিতীয় পাঠ আছে না! তাছাড়া এমন ভাষায় তো প্রায়ই কবিতা লেখা হয় না। ঠোক্করটা সেজন্যও হতে পারে। ঘ) আবেগ আবার একটু বিষয় মাখানো হয়। হ্যাঁ আছে। বিষয় আছে না-বিষয়ীর বিষয় হয়ে। বা কবিতাগুলো\লেখাগুলো বিষয়ের বিষয়ীভূত নয় এমনযেন রামকৃষ্ণ কথিত সংসারে থাকা পাকাল মাছের মত। বা বলা যায় নিষ্কাম প্রেম। আহাহা কী কথা! কিন্তু হয় গো। জানতি পারনা। ঙ) আরেকটু খোলতাই করার চেষ্টা করি। আসলে কী যেন একটা কিছু বলতে চাওয়া আছে, অথচ পুরো তো নয়ই, এমনকি ইঙ্গিতগুলোও সবসময় খোলসা করা নেই, বলতে চাওয়াটা বজায় রেখেই। এই বলতে চাওয়াটা বিষয় হলে ক্ষতি কি? নেইই তো। মজাটা আছে পুরো, দ্রৌপদীর শাড়ি আর ফুরায় না। চ) কত হালকা পুলকা শব্দ, এমন তেমন তুর বোধহয় ইত্যাদি ইত্যাদিকে স্রেফ কর্তা বানিয়ে ভজনা, মানে তার খানা দানা শোনার ফ্রি ব্যবস্থা খুব বেশি আগে দেখিনি। কিন্তু ও মা, এখানে দেখছি ‘এই গরু সর’ না হয়ে কেমন একটা মাত্রা পেয়ে যাচ্ছে। বলতে ইচ্ছে করছে হ্যাঁ এমনটা তো হতেই পারে। এভাবেওতো ভাব ও ভাবনাটা বজায় রাখা যাচ্ছে। উদাহরন চাই? এই এক ঝামেলা। আলোচনা করতে হলে উদাহরন দিয়ে প্রমান করতেই হবে? প্লিজ পড়ুন  বইটা, পদে পদে আছে। ছ) তোমার আগের বইটায়(চলো সিঙ্গলহ্যান্ড) দেখেছিলাম নিরীক্ষা হিসেবে শব্দ তথা পঙক্তির পার্শ-প্রতিফলনের প্রতিক্রীয়া। এবারে দেখছি পার্শ ভাবনারাজীর খেল। যেন পাশাপাশি থাকা সমূহ ভাবনা তার জায়গা ধরে নিচ্ছে অবলীলায়। আর তাতেই অবধারিত গতি আর দিকনির্দেশনার ইঙ্গিত। বাহারে বাহা। এতও পারো। জ) কবিতা কি গদ্যের খুব কাছাকাছি যেতে পারেনা? এমন একটা প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যেতে পারে এই বইটিতে। যেন গদ্য পদ্য কবিতার সীমারেখাটাকেই চ্যালেঞ্জ। এবং সেখানে করে দেখানো আছে। সংজ্ঞাকে সংজ্ঞাহীন(মুর্চ্ছা)পাওয়ানো। কখনো মনে হবে পুরো গদ্য, একটু খেয়ালে সে যে কবিতার কত কাছাকাছি, কত মাখামাখি একটু হলেও আলাদা বৈশিষ্টের দাবী করে বৈকি। ঝ) ক্যাপশন সহ ছবি আছে, বাংলা কবিতার বই এ ইংরেজীতে ৪-৫ পৃষ্ঠার গপদ্য আছে, লিপি আছে। এসব অন্যব্যাপার বোঝতে কিনা জানিনা। তবে মানিয়ে গিয়েই একটা প্রোডাকশন। ভুলও বলতে পারি। ঠিক জানিনা। ঞ) এ সময়ের কবিতার ওপর অলিখিত বিধি নিষেধ অনেক কিছুই মানা হয়নি। উপরন্তু তাদের কিছুকে চ্যালেঞ্জ জানানো আছে। আর অতিরিক্ত হিসেবে আছে কবির নিরীক্ষার নিজস্বতাঅন্যব্যাপার হয়ে না উঠে তার উপায় ছিলনা। কবিতা যে কোথায় নিয়ে যাবে হে প্রিয় প্রকৃত পথিক!  

কবিতা যেখানেই নিয়ে যাক। আমরা আরেকটু থাকি এই তিন কবিতে। কোনো তুলনামূলক আলোচনা নয়। এদের কবিতা ভাবনার ধর্ম নিয়ে আমার আর কিছুটা বকবকানি যার হয়ত কোনো মানে নেই।

   
এই অবধি এসে বলতে পারি, একই সময়কালে এবং প্রায় একই স্থানিকতায় অবস্থানেও এদের প্রত্যেকের নির্মাণ স্বত্নত্র। উদ্দেশ্য এক, যাত্রাপথের কসরতে সামান্য মিল নিয়ে ভিন্ন। প্রত্যেকে তাঁকে নজর করাতে বাধ্য করবেই। সেই বার্তা বসত করছে বইগুলোতে। আমি এইসব উপহারে কৃতজ্ঞ।

যে তিনটে বই আলোচনার কেন্দ্রেঃ ১) লোডশেডিং- অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়। বৈখরীভাষ্য। ২) কোনো একটা নাম- অনিমিখ পাত্রকৌরব। ৩) অন্যব্যাপার- অমিতাভ প্রহরাজ। বৈখরীভাষ্য।