62nD pOsT : রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায়ের 'রমলাকান্তের উট ও অন্যান্য' নিয়ে লিখছেন রমিত দে



দুটো পরছায়ার মধ্যে আস্তে আস্তে আমরাও ঢুকে পড়ছি রাজর্ষি

তবে, একটা তবে আছে......

বিষয়ের ইমপ্রিন্ট থেকে ভ্রামণিকে আনা যাক বিশুদ্ধের আরও কিছুটা; বিরোধাভাসকে দেওয়া যাক স্থান কাল- শূন্যতা, ফোনিমের ফ্রেস্কো হওয়ার অনুঘটক; শহরের যে কোনায় দাঁড়িয়ে শীত স্বাভাবিকের থেকে দু ডিগ্রী কম,  যেখানে শব্দ গুলো বাকি শব্দদের নিয়ে পেরিয়ে আসছে প্যারানর্মাল ফেন্স, ঠিক সেখানেই কিউবিস্ট গ্রহণ থেকে, নিয়মানুবর্তন থেকে উদ্দেশ্যহীন দ্বিতীয়তায় এমনই এক প্রাক শাব্দিক অপরিচয় আছে। মাদারীর খেলা আছে। উস থেকে মনোনয়ন পেয়ে সে আছে আলাদা মাপে। আর এই আত্মবিরোধ, ডিপ লোথিং অফ সেলফ, আলো গুলো ভেঙে ফেলে আত্মবিক্ষায় খুঁজে ফেরা বিম্বের মৌল নিয়েই জন্ম-বিজন্ম-অবিজন্ম থেকে রমলাকান্ত নেমে আসে ক্যাজুয়ালে। তার স্বয়ংক্রিয় সূচনার থেকে একে একে কুড়িয়ে নেয় রং কুড়িয়ে নেয় বিশ্বনিয়ম , লক্ষ্য করে তার ওড়ার কথা , তার ওড়া আসলে পক্ষপাতহীন আলস্যের দিকে, যেখানে কিচ্ছুটি নেই অথবা ছায়াটির সাথে গান বেঁধেছে চেতনিক ফেরোমেন। রমলাকান্ত কে? যার আন্তর্বয়নেই লেখক চিনিয়েছেন একটা বহির্ভূত থাকা। ফ্যালাসির মধ্যেই ফেরা-লেখা-অধরা অতিরিক্ততে তুলে রাখা বিমূর্ত পাসপোর্ট। আসলে রমলাকান্ত কোন জীব নয় বরং আজীব এক স্বপ্নের পরিভ্রমণ। ড্রিম থ্রুআউট দ্য ড্রিমস, থ্রুআউট ট্রাভেল ডিপস। স্বপ্নগুলো তো আর কিছু নয়, আকাশের গা বেয়ে ঝুলে থাকা অদৃশ্য দড়িদড়া, উপকূল থেকে আমাদের নোঙরগুলোকে তুলে নিয়ে হাওয়ায় উডিয়ে দেয়.....

           এই স্বপ্নের কথাই কি বলেছেন কার্ল জাঙ্গ? The dream is the small hidden door in the deepest and most intimate sanctum of the soul, which opens to that primeval cosmic night that was soul long before there was conscious ego and will be soul far beyond what a conscious ego could ever reach.............এই ক্ষত আর অক্ষত সরনীর কথাই কি সংলাপে বইছে রমলাকান্তের উটেরা? এমনই এক গোটা নীল ডুমোফুল হয়ে ফুটে থাকা স্বপ্ননির্মিত দোজখেই কি রাজর্ষির ডকুমেন্টেশান? পরিচিত অবিশ্বাসের থেকে আর্তনাদের থেকে বেরিয়ে এসে তার সমবায়িত আত্মার কোডিং?

কাঠামো ভেঙে দিয়ে রাজর্ষি তুলে রাখছেন মিতির ভেতর আরও কিছুটা যতিচিহ্নহীন থাকা। থাকা আসলে বিযুক্ত মনোজিনে লেগে থাকা সেই চিরকালীন বশীকরন যেখানে রমলাকান্তও ত্রিধাগ্রস্ত, নির্মানের নির্মোহে খুঁজে নিতে চায় অতিরিক্তের আকর, যাপনের ক্রেডেন্সিয়ালসে গড়িয়ে দেয় প্রতিযাপন, প্রতিজীবনের সন্ধানে একটি প্রতিসময় ও প্রতি অবস্থান খুঁজে নিতে চায়। ঘোষনার ভেতর , সিলেবাসের ভেতর রমলাকান্তের এই থাকা ক্রমশ বড় হয় , অপ্রাসঙ্গিক করে তোলে অর্জিত ক্ষয়রোগগুলি আর ঠিক এখান থেকেই রমলাকান্ত ভেসে যায় কাঠবেড়ালনীদের দেশে দেশে, ঘনবনাজ থেকে তুলে আনে বিমূর্ত জার্নালগুলো। এই অসম কুঞ্জকাননেই ক্যাম্পাসিং করছে রমলাকান্ত তার পরিত্রাতা উটেদের নিয়ে। আত্মজ টেক অফ থেকে আরও এক সম্ভাবনা রিট্রিট করছে সম্পূর্ণতার দিকে। অনুসঙ্গ নেই, সংযোজন নেই, তবু আমাদের জানা আছে রমলাকান্ত আসবে, তাঁর অলীক ইনস্টলেশন নিয়ে, অক্ষরবিহীন সম্পাদ্য নিয়ে, ঘুরে ঘুরে উড়ে বেড়ানোর মত একদল সবল ও হইচই উট নিয়ে সামুদায়িক থেকে সংগ্রহ করবে অনুগত স্বতন্ত্র্য।

       রমলাকান্তের উট ও অন্যান্য নিয়ে রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায় তার পরিব্রাজক বৃত্তটিকে ফ্রেম ইন করলেন এমনই সচেতন স্বপ্ন দেখার মহড়ায়। ডিসকোর্স ডিকনস্ট্রাকশনের চেয়েও যেন এক বৃহত্তর নান্দনিক মেধার দিকে সাজালেন তার সার্বিক আয়োজন। কবি রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায় থেকে গদ্যকার রাজর্ষি, এ্যাকাডেমিকস থেকে বেরিয়ে এসে আরও কিছুটা অন্তর্ভেদী জলছাপ, ইনার স্টিলনেস থেকে ইলোপ করলেন যা কিছু আরোপিত। ২০০৭ এ প্রকাশিত গদ্যসংকল রমলাকান্তের উটের পূনঃসংকলনের পাশাপাশি অন্যান্য অংশে কনট্যুর করলেন এক অদৃশ্য ভিসেরাল বোঝাপড়া; ইন্টারভাল বিটউইন থটস নিয়ে, থিসিস অ্যান্টিথিসিসের প্রেস্ক্রিপশান নিয়ে লিখলেন-তারপর আমি আর কিছু করতাম না। দুটো তিন ইঞ্চি ইঁটের মধ্যবর্তী বায়ুরোধ সমস্ত বিরোধ বিগলনের ভেতর ঢুকে পড়ার চেষ্টা করতাম।।.......চাঁদ আহত করে যেতো ম্যাকফার্সন হোস্টেলের ছাদ গড়ানো বাঁকা রেলিঙের ঘোড়ানো সিঁড়ি। ট্যুশানের বেলা পড়ে আসতো। বহুভাষিক বেলা। বহুস্বরিক অতলান্তের মধ্যে নিয়ে আমাকে গড়াতো। যে কোনো গড়ানোর সুরে, ততদিনে, আমি নিঃশব্দ বসানোর শিল্পরুপ শিক্ষিত হয়েছি। নির্ভাষ রচনার কৌশল রপ্ত করেছি। তারপর থেকেই তো আস্তিন গোটাই, আর তাঁবু। আবার আস্তিন ফেলি, তাঁবুও।।.....আর একটা, আরো একটা, মাদারীর খেলা

রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায় তাঁর গদ্য সংগ্রহ রমলাকান্তের উট ও অন্যান্য তে সাদা কথার থেকে পৌঁছে যান সুক্ষের সহযাপনে, স্বপ্নের স্পাইরাল প্রজননকালে। মাদারীর খেলার মতই থাকা না থাকার ভেতর নির্দেশিত পথ ছেড়ে দিয়ে তাঁর এই আত্মসম্ভূত প্রস্তাবনা, এই জবানবন্দী নির্বিকল্প সূদুরের দিকে লীন হয়ে আছে। একটা দ্বৈত প্যারাডিমের দিকে মেধাবী হয়ে উঠছে তাঁরই রেজোনেন্সে অভেদান্বিত সুখীরাম, রিমলি ,সূতনু, অরুপ বা সুনীতার মত মুক্ত গদ্যের ম্যুরালগুলি। কেবলমাত্র একটা বিরং অ্যালুমিনিয়াম পেন্টিঙের রিক্সায় বসে বসে যেখানে হংসগ্রীবার সুখীরাম বুনে নিতে পারে বিরল অবনির্মান, এ পোয়েটিকস অফ আনঅ্যাওয়ার; বাহারী আসমানী শাড়ী, জড়ি পাড়, রুপো রঙের জুতো পরে রিক্সায় উঠতে গিয়ে যে দিদিমনির পায়ের আঙুল ছুঁয়ে ফেলে সে, যে প্রসূত লীলাময়তার নিছক নাগাল ছুঁতে চায়, সেই ভেরিয়েবল থেকেই রাজর্ষি তাকে নিয়ে চলেছে আরও এক পূর্নবাসনের দিকে, প্রশ্রয়ের দিকে, যেখানে দৈনন্দিন অভিলাষের পাতায় সেজে ওঠে নিস্ক্রমনের রুমঝুম, সিৎজোফ্রেনিক বাহার বাগান যা সে কোনোদিনও পেরোতে চায়নি অথবা এই একমাত্র পথ, অনিবার্য ধ্রুবস্পর্শ যা অশরীরীর মতো তাকে বেঁধে ফেলে অনন্ত কালমাত্রায়। হংসগ্রীবার সুখীরামের সাথে যাপনের আধগড়া পার্কিং প্লেসগুলো পেরোতে পেরোতে মনে পড়ে বহুরৈখিক জ্যামিতির আশ্রয়েই সুখীরামকে নিয়ে রাজর্ষি খুঁজে চলেছেন অন্তরায়নের বীজক্ষেত, নির্মাণ  বির্নিমানণর ভেতর কোন এক ছিলেটানা অবনির্মাণের বিকল্প। কাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে সুখীরাম? রাজর্ষিই বা কোন অসজ্জার দিকে সাজাচ্ছে শেকড়ের নিয়ম? ভেদ থেকে অভেদের সনাক্তকরণ করতে গিয়ে পাঠককে নিয়ে গদ্যকার রাজর্ষি এই নির্ভাষ দোলনেই নেমে পড়ে, ঠান্ডা রঙে উপচে পড়ে পুর্নজন্মের রীতি প্রবাহগুলি।
   
পুনজর্ন্ম রাতে তারা ফের নেমে এলো জলে। ক্ষতগুলো জল দিয়ে ধুলো। ধুয়ে দিলো। এসময় বিচিত্র জল সুকৌশলে তাদের শরীরে ঢুকে পড়ে। এসময় তাদের মায়েরা মগ্নতা অনুশীলন করে। তাদের নির্দিষ্ট করে কোন উপাসনাগৃহ নেই। তাই তারা নৌকোর খোলের চারপাশে স্থির হয়ে বসে থাকে। মাথার ওপর ফুলতে থাকে রাত। জলের বিচিত্র আকর্ষনে ফুলে ফুলে ছড়িয়ে যায় পল্লীময়। তারা দেখে জল থেকে ভেসে উঠছে মাছ। হাজারো হাজারো মৃত মাছ। মাছেদের পেটে আড়াআড়ি গেঁথে আছে তাদের মেয়েদের চুল। সারেঙরা আর ফেরা না কখনও। বিদ্ধতার অর্ধেক পেটে নিয়ে সারেঙ মেয়েরা বসে থাকে। জলের কাছ ঘেঁসে এলে তাদেরও লালিমাগুলি ছড়িয়ে পড়ে জলে। কেউ তখন তাদের মনে রাখে ও রাখায়। একদিন তলপেটে তারা চাপ পায়। তখন জলের খুব কাছ ঘেঁষে আসে। তখন তারা ডিম পাড়ে। তখন নৌকোর খোল উপচে পড়ে মৃত আঁশ। আশনাই কখনো মরে না। সেই আঁশগুলো থেকে সারেঙীরা তন্তু ছড়ায়। তারপর বুনে যেতে থাকে। তাদের পোশাক বোনা শেষ হলে তারা বুক দিয়ে ধোয়। তারপর আকাশের গায়ে মেলে ধরে। জ্যোস্না তো আর কিছু নয়। এই কয়েকটা পোশাক মাত্র। পৃথিবীকে এক জলের নীচে আশ্বস্ত রাখে।  
                  ......তিথিরাত পড়তে পড়তে কোথাও যেন গদ্যকার রাজর্ষিকে ছাড়িয়ে তত্ত্ব কে ছাড়িয়ে উপাত্তকে ছাড়িয়ে নাগালে চলে আসে কবি রাজর্ষির ইন্টেলেকচুয়াল ম্যাপিং; জলের অতল থেকে তুলে আনেন অলৌকিক মাশরুম, জলের গন্ধওলা স্পর্ধা দেখিয়ে ফুটনোটে লিখে রাখেন বিপরীত ফ্যান্টাসিয়া। গদ্যসংগ্রহের প্রায় প্রতিটি গদ্যেই রাজর্ষি পরিচর্যা করেছেন এক তৃতীয় বিকল্প, অলীক বিশুদ্ধতায় পৌঁছনোর যুগ্মপ্রয়াস। পাঠকের হাত ধরেই তার এই পর্যটন মেরিমেন্ট পাঠকের বর্হিগৃহের দিকে। নদী জন্মের গল্পে যেখানে তিনি অনায়াসেই বলতে পারেন-মানুষইতো ক্ষত দেয় আর ক্ষতের গভীরে যে নিরাময় লুকিয়ে থাকে তার সাধনা করে...এই নিরাময়ের দিকেই কি রাজর্ষি তার গদ্যের গা অল্প চিরে দেন? বাড়ি ফেরার আগে ঝুঁকি নিতে চান আরও একবার?আসলে যেকোনো প্রস্তুতির ভেতর তার প্রস্তাবনা খুব পরিস্কার, খুব শান্তভাবে তৈরী হচ্ছে প্রতিটা পরিক্রমন, সহজভাবে সমর্থন করছে প্রতিটা পৌঁছোনো। একটা ঘোরের মধ্য দিয়ে তার এই হাঁটা, স্ট্রাকচারের কনস্ট্যান্ট থেকে খুঁজে ফেরা এই হাঁটার ঘোর। অনেকখানি জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাজর্ষির এই ফর্মলেশ রিলম অফ বিইংগ। একটা টুলটুলে শুন্যতা, একটা শূন্যতা গাছ যেখানে নেই ফুল নেই গাছ অথচ ফুটো করে ঢুকে পড়া পরিশীলিত শূন্য বাকলে। ঠিক যে শূন্যতার কথা যে এন্ডলেস স্পিচের কথা বলছেন কোহেন-Please make me empty, if I'm empty then I can receive, if I can receive it means it comes from somewhere outside of me, if it comes from outside of me I'm not alone! I cannot bear this loneliness. Above all it is loneliness

অভিজ্ঞতালব্ধ গদ্যকারের মত অনুসৃজিত পর্যবেক্ষণের থেকে স্বনিয়োজিত দার্শনিকতার টেক্কা নিয়ে উসগুলোকে চিনিয়ে দেবার খেলা। স্থিতি অস্থিতির যে ক্রশিং পেরোতে পেরোতে, ডাইর্ভাস স্বাদকোরকগুলোকে বিসর্গিত করতে করতে শুদ্ধতম অকল্পনের দিকে নিরিবিলি হতে চাইছেন রাজর্ষি, তা আসলে ঘন রসে পৌঁছে যাওয়া আত্মার কিছু সফলতা, কিছু অনভিব্যক্ত। পোর্টাল অফ এন ইল্যুশন। তাঁর প্রতিটা টেক্সটে জমায়েত এই আধখানা উন্মুক্তি, যেখানে জীবনের সার্থকতা পেরিয়ে নিদ্ধির্ধায় আরও এক চরিত্র আছে, শ্লথতায় উদাস কিম্বা আনম্যানিফেস্টেড উচ্চারনের রোদ মেখে ভাবনার দূরত্বকে ক্রমাগত বাড়িয়ে চলেছে সে, চরিত্র থেকে চিত্র, চিত্র থেকে চৈতন্য, অনন্ত ফাল্গুনি নিয়ে নিয়মের দ্বিতীয়তায় তার গ্রাফিত্তি।

একটি তৃতীয় বিকল্পের সন্ধানে এসে রাজর্ষির গদ্যসংগ্রহের সাকল্যিক প্রকল্পটি, ভিন্নতৃষার খসড়াটি ক্রমজায়মান হয়ে ওঠে, আজ্ঞাবহ আত্মজ থেকে হয়ে ওঠে আরও স্পষ্ট অন্বেষনের।
যেখানে শূন্যতায় নির্মিত দুটি মানুষ-মানুষীকে দুটি অঘোষনাকে অসংযোজিত অন্তর্জগতের সিফটে টেনে এনেছেন রাজর্ষি, ব্যবহার করেছেন পরিসরকে।যাপনের জাইলেম-ফ্লোয়েমে দাঁড়িয়ে যেখানে চরিত্র বুঝে নেয় ভারের ভেতরের নিরাবয়ব অজস্রতার কুশলবার্তা; মনোভ্রমনের থেকে কি অনায়াসেই সে বলতে পারে-সেই প্রথম তুলোবীজের মত আমার আত্মাকে মন্ত্রমুগ্ধ দেখেছিলাম এক শীর্ণ চাদরের মধ্য দিয়ে হেঁটে যেতে। আমার আঙুলগুলোই কি আমার প্রকৃত আত্মা অথবা বুনো বাদাম ক্ষেতে ধেয়ে আসা কফিরঙা মেঘ। আমি সেই প্রান্তরের মধ্যে দাঁড়িয়ে হু-হু একা।।....মাপজোপের বাইরে এসে নিজেরই ছেড়ে রাখা পোশাকের ভেতর পরিচর্যার ভেতর রাজর্ষির এই আদি খেলা, এই অনির্ণয়ের আত্মসম্পূর্ণতা। বিষয়ের বহুত্ব থেকে স্নায়ুর ব্রম্ভান্ডে রেশমমথের সৃজন। পোস্টমর্ডান সাহিত্যভাবনার এপিটোম যে অ্যাবসার্ডিটি, তাকেই আরও কিছুটা ড্রিমলেস স্লিপের দিকে একলা করতে চেয়েছেন রাজর্ষি; কৃতজ্ঞ করতে চেয়েছেন। চৌকোন ধূলো মুছে আধাঁর যাত্রার দিকেই একা করতে চেয়েছেন বস্তুজগতের ক্লাউনিক কোলাহলকে। প্রথাগত থেকে ইন্টেলেকচ্যুয়াল প্যার্টানকে ফরওর্য়াড করেছেন জড়জগতের উর্ধ্বে; অ্যারাউন্ড দ্য সারফেসে;

রমলাকান্তের উট ও অন্যান্য গদ্যসংগ্রহের প্রথম গল্প ভুজঙ্গ, শেষ গল্প রঙ্গনের বোন, সম্পূর্ন তত্ত্বতল্লাশীর পর কেউ বুঝতেই পারে না পায়ের শব্দ তুলে কে নেমে গেল প্রান্তিক অবকাশের দিকে! যেন পৌঁছব না কোনোদিন/ পৌঁছবে না কোত্থাও;  পাখিভাষা ছাড়াই তাঁর আনইলাসট্রেটেড বায়োস্কোপে তুলে রাখা স্বপ্নের রিফুকাজ, আঁজলা আঁজলা জন্মকথার পাশে  জন্মান্তরের অভেদ। গল্প লেখার ছলেই লিখেছেন গল্প লেখার ছলে। যেখানে অনুপম, আরোহিনী, স্ক্র্যাপিং জীবনের যাবতীয় পলিফোনির ভেতর বোঁটাহীন আলো ফেলছেন রাজর্ষি, বহুরৈখিক প্রানময়তার ভেতরই হাতড়ে বেড়াচ্ছেন চেতনার মবিলটূকু, সম্ভাবনার মহাকাশটূকু, আর এই অনুক্রম যুক্তির পথেই তার অবান্তর বিযুক্তি যেখানে গদ্যকার নিজেই খুলে দেখাচ্ছেন চেতনার অপরিমাপযোগ্য বুদবুদ, সম্পূর্নতার দিকে তাকিয়ে গন্তব্যের দিকে তাকিয়ে জীবনের বাইরে সাহিত্যের বাইরেও লিখে রাখছেন তার ব্যক্তিপ্রতিস্ব, জয়িত্রী রঙের স্বপ্ন, সমান্তরাল স্থানাঙ্কের কথা। আমি আমি অনুপমকে বলিনি আমি-ই আরোহিনি, আরোহিনীকে বলি নি আমি-ই অনুপম। এই গন্তব্য দেখা আমার অগন্তব্যে রয়ে গেলো।.....চৌমাথা ভিস্যুয়ালগুলো নিয়েই যেন তার সম্পূর্ণতার বিজ্ঞান।


                                    এই সম্পূর্ণতার বিজ্ঞান ঠিক কেমন? এনলাইটেন্ট ইমিনেন্স এ কতটা আকুতি আর আয়োজনে স্বকল্পনার দিকে দাবাছক সাজাচ্ছে অ্যাবসুলিউট? রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায়ের রমলাকান্তের উট ও অন্যান্য পড়তে পড়তে বারবার গড়িয়ে যেতে হবে এমনই কথা থেকে উপকথার দিকে, প্রমাণ থেকে প্রবণতার দিকে। তার গদ্যসংগ্রহে ঘুম নেই অথচ স্বপ্ন আছে, ভ্রাম্যমান উসবের দিকে আছে প্রসন্নতার আশ্রয়; ছক ভেঙেছেন রাজর্ষি, এগজিট থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে যেন জেনে বুঝেই পা রাখছেন আরও এক গোলাপী রঙের বিস্মৃত এগজিটে। কোন এক সাংকেতিক গর্ভগুহায়। রমলাকান্ত কে নিয়ে, অরূপ কে নিয়ে, অনুপমকে নিয়ে, সুতনুকে নিয়ে নাব্যতার ডোমেনে এক নির্মোহ নামবহন,এক অনিকেত পরিচর্যা। যাপনকে তিনি রিমেক করাতে চেয়েছেন অপ্রাকৃত প্রতিবেদনে, যা পেলব মসৃন, যা সামান্য, যা নিয়মভঙ্গের। প্রকৃতির শোক থেকে, স্থানিক সংখ্যা নির্ধারণ থেকে রাজর্ষির ফিনিক্সরা উড়ে চলেছে দেওয়ালহীন যাবতীয়ের দিকে আর একটি গোবালক ও বালিকা পরস্পরের ব্যবহারযোগ্য হাতগুলি প্রার্থনা করছে শেষের আগের দৃশ্যে..............